সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

কমলা ও মাল্টার বাম্পার ফলন, দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিভিন্ন জাতের কমলা ও মাল্টার বাম্পার ফলনে বাণিজ্যিক ভাবে লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন মাঈদুল ইসলাম। তিনি উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের রাজারাম গ্রামের আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে। বর্তমানে ৪০ শতক জমিতে দুই শতাধিক কমলা ও মাল্টা গাছ লাগিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন বাহারী রংয়ের কমলা ও মাল্টা ঝুলছে গাছে গাছে। চারা লাগানোর মাত্র তিন বছরের মাথায় গাছে কমলা আসতে শুরু করে। বর্তমান তার বাগানের বয়স চার বছর। গত বছর থেকে তিনি বাণিজ্যিকভাবে কমলা ও মাল্টা বাজারজাত শুরু করছেন। আর মাত্র কয়েকদিন পরই বাগান থেকে প্রায় ২০-২৫ মণ কমলা ও মাল্টা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি, যা বর্তমান কমলার বাজারমূল্যে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাদে দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানিয়েছেন ফল চাষি মাঈদুল।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঈদুল ইসলাম একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি বাবার জমিতে সমন্বিত ফলের চাষ শুরু করেন। প্রায় ১ একর জমিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফলের গাছ। আম, মাল্টা, আঙুর, লটকন, পেয়ারা, ড্রাগন ও আজোয়া খেজুর চাষের পাশাপাশি কমলা চাষের উদ্যোগও নেন তিনি। প্রথমে ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩০টি চায়না ঝুড়ি কমলা জাতের গাছ সংগ্রহ করেন তিনি। পর্যাক্রমে দেশের বাহিরে ভারত থেকে বিভিন্ন জাতের কমলা ও মাল্টার চারা সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২’শ টি চারা রোপণ করেছেন। এছাড়াও সংগ্রহকৃত গাছ থেকে কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে ১০ শতক জমিতে ২ হাজার কমলা ও মাল্টা গাছের কলম চারা রোপণ করেন। কলমকৃত গাছের চারা কয়েক দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি শুরু হবে। এদিকে ২ হাজার কমলা ও মাল্টা গাছের মধ্যে প্রায় সব গাছ থেকে কমলা ও মাল্টা পেতে শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভাবে কমলা মাল্টা চাষ ও আয়ের স্বপ্ন বুনছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলা বাগানে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। সময়মত জৈব সার, কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক স্প্রে ব্যবহার করে কমলা গাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যায় যা প্রতি বছর দ্বিগুণ ফলন বৃদ্ধি পায়। মাঈদুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি আমি কৃষিতে আত্মকর্মসংস্থানের এ পথ বেছে নেই। কমলা চাষের পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ আছে। তবে বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় কমলা চাষের আগ্রহ বেড়ে গেছে। আমার ৮০ শতক জমিতে চায়না ঝুড়ি কমলা ও মাল্টা জাতের ২শতাধিক গাছ রয়েছে। এটি মিষ্টি জাতের কমলা ও মাল্টা। খেতে অনেক সুস্বাদু। বর্তমান বাগানের ৪ বছর। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬ লক্ষ টাকা খরচ করেছি। গত বছর এ বাগান থেকে আয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আশা করছি এ বছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষের কমলা ও মাল্টার চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যদি দেশের মধ্যে কমলা ও মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ করা যায় তাহলে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইরের দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কমলা ও মাল্টর বাগান দেখতে আসা আনিছুর রহমান, লেয়াকত আলী, দুলু মিয়া ও ইসলাম সহ আরও অনেকে বলেন, মাঈদুলের কমলা মাল্টার বাগান দেখে খুবই ভালো লেগেছে। আমরা যারা বেসরকারি চাকরি করি বা কৃষি কাজ করি তার পাশাপাশি কৃষিতে মনোযোগ দিলে ভালো আয় করা সম্ভব। আমরাও কমলা ও মাল্টার বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে কৃষি বিভাগ যদি পাশে থাকে তাহলে ফলের বাগান করা চাষিরা আরও উপকৃত হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, কমলা ও মাল্টা সহ বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মাঈদুলের কমলা ও মাল্টার বাগানে আমাদের কৃষি অফিস থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়মিত দেখাশোনা করছেন। তাকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তার বিভিন্ন ধরনের ফল চাষে কৃষি অফিসের সহযোগিতা থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com